দেশের তথ্য ডেস্ক :- পরিবর্তিত বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে টেকসই শান্তি ও নিরাপত্তা সুসংহত করার অভিপ্রায়ে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস ২০ জুলাই বৃহস্পতিবার ‘শান্তির জন্য নতুন এজেন্ডা’ উপস্থাপন করেছেন।
এ সময় মহাসচিব উল্লেখ করেছেন যে, শীতল যুদ্ধ পরবর্তী সময় শেষ হয়েছে এবং আমরা একটি নতুন বৈশ্বিক ব্যবস্থা এবং একটি বহুমুখী বিশ্বের দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। এজন্যেই শান্তি ও নিরাপত্তার জন্যে আরো শক্তিশালী এবং বহুপাক্ষিক কাঠামোর প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হবে। ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা, মানবাধিকার লংঘনের গুরুতর ঘটনাবলি, সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থাহীনতা, নতুন ধরনের সংঘাত, সন্ত্রাসবাদ, তথ্য-প্রযুক্তির অপব্যবহারে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের প্রবণতা বেড়েছে। প্রতিনিয়ত মানবিকতা ধ্বংসের হুমকি উচ্চারিত হচ্ছে। পারমানবিক যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান হমকি এবং বহুপাক্ষিকতার প্রতি ক্রমবর্দ্ধমান সংশয় দ্বারা নিরাপত্তাহীনতা তৈরী হয়েছে বলে মন্তব্য করেন মহাসচিব।
‘দ্য নিউ এজেন্ডা ফর পীস’ (শান্তির জন্যে নতুন পরিকল্পনা) শীর্ষক এই কর্মসূচিতে নতুন চ্যালেঞ্জসমূহকে চিহ্নিত করে তা দূর করতে সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদ দেয়া হয়েছে। বিশ্বাস, সংহতি, এবং সর্বজনীনতার মূল নীতিসমূহকে ঘিরে এই পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়েছে যা জাতিসংঘের সনদ এবং একটি স্থিতিশীল বিশ্বের ভিত্তি তৈরির সহায়ক হবে-উল্লেখ করেছেন মহাসচিব।
এতে ৫টি বিষয়ে অগ্রাধিকার রয়েছে। অগ্রাধিকারের তালিকায় ১২টি বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব রাখা হয়েছে। প্রথমেই, বৈশ্বিক স্তরে সংঘাত রোধ করতে এবং ভূরাজনৈতিক বিভাজন, কূটনীতিকে অগ্রাধিকার দেয়ার পাশাপাশি আঞ্চলিক নিরাপত্তা স্থাপত্যে বিনিয়োগের জন্য জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানিয়েছেন গুতেরেস। দ্বিতীয়ত: তিনি একটি ‘প্রতিরোধের দৃষ্টান্ত যা সকল প্রকার সহিংসতাকে চিহ্নিত করে’ হাইলাইট করেছেন। মধ্যস্থতা এবং সামাজিক সংহতির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে মানবাধিকারের প্রতি সম্মান এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, টেকসই উন্নয়ন, জলবায়ু কার্যক্রম ও শান্তির মধ্যেকার সংযোগসমূহকে অগ্রাধিকার দেয়ার কথা রয়েছে উপরোক্ত এজেন্ডায়।
মহাসচিব বলেছেন, এসডিজির পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে আমাদের অবশ্যই ঘোষিত লক্ষ্য অর্জনের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে হবে। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, প্রতিরোধ এবং টেকসই উন্নয়ন প্রক্রিয়া পরস্পর নির্ভরশীল এবং পারস্পরিকভাবে শক্তিশালীকরণ। তৃতীয় অগ্রাধিকারে রয়েছে, বর্তমানের সংঘাতের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার জন্যে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমকে আপডেট করতে হবে-যার অধিকাংশই জটিল এবং দেশীয়, ভূ-রাজনৈতিক এবং আন্তর্জাতিক কারণে কয়েক দশক ধরেই অমিমংসিত রয়েছে।
জাতিসংঘ প্রধান বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন, শান্তি বজায় না থাকলে শান্তি রক্ষার অভিযান কখনোই সফল হয় না। অথবা রাজনৈতিক সমাধান কল্পে নিরাপত্তা পরিষদের সুস্পষ্ট অগ্রাধিকারভিত্তিক এবং বাস্তিবসম্মত ম্যান্ডেট ছাড়া তারা তাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারে না। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং স্বায়ত্তশাসিত অস্ত্র ব্যবস্থার মত নতুন প্রযুক্তি দ্বারা সৃষ্ট হুমকি মোকাবেলায় বিশ্বব্যাপী শাসনের প্রয়োজনীয় উল্লেখ করে উদিয়মান ডোমেন এবং প্রযুক্তির অস্ত্রায়ন রোধ করা এবং দায়িত্বশীল উদ্ভাবনের ব্যাপর প্রচারণাকে চতুর্থ মূল ক্ষেত্র হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। পঞ্চম অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রটিতে সম্মিলিত নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য নিরাপত্তা পরিষদ, সাধারণ পরিষদ, জাতিসংঘের নিরস্ত্রীকরণ যন্ত্রপাতি এবং পিস বিল্ডিং কমিশনে জরুরী সংস্কারের আহ্বান রয়েছে।
মহাসচিব বলেন, বিশেষ করে নিরাপত্তা পরিষদের উচিত আরও পদ্ধতিগতভাবে শান্তি অভিযাওেনর ম্যান্ডেটের শান্তি বিনির্মাণ মাত্রার বিষয়ে কমিশনের পরামর্শ নেয়া।
শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর তাগিদ দিয়ে মহাসচিব বলেছেন, টেকসই উন্নয়নের জন্যে ২০৩০ এজেন্ডাকে সমর্থন করতে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি এবং জাতিসংঘকে আধুনিকীকরণের লক্ষ্যে ট্রান্সফর্মিং এডুকেশন এবং ইউএন ২.০র ওপর অন্যান্য নীতিকেও অনুসরণ করতে হবে। সামনের বছর ‘সামিট অব দ্য ফিউচার’ অর্থাৎ সুন্দর ভবিষ্যতের প্রত্যাশায় জাতিসংঘ শীর্ষ সম্মেলনে এসব এজেন্ডা পরিপূর্ণভাবে গ্রহণ করতে হবে।